ফেইক অর্ডারের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ !!!!! আসুন জেনে রাখি ফেইক অর্ডার থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়।
আমরা যারা ফেসবুক ভিত্তিক অনলাইন বিজনেস করে থাকি সবার কাছে ফেইক অর্ডার একটি পরিচিত শব্দ। অর্ডার কনফার্ম করার পর যখন গ্রাহকের কাছে প্রোডাক্ট পাঠাই, এরপর আর তাকে পাওয়া যায় না এবং সে প্রোডাক্ট রিসিভও করেন না। এতে করে লস শুনতে হয় ব্যবসায়ী ভাই-বোনদেরকে। ডেলিভারির জন্য যে টাকাটা খরচ হল এটা আর্থিক ক্ষতি, এছাড়াও প্রতিটি অর্ডারের পেছনে পরিশ্রম তো আছেই। ফেইক অর্ডার পুরোপুরি বন্ধ করার উপায় নেই, তবে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে ফেইক অর্ডার এড়িয়ে যাওয়া বা কমিয়ে রাখা সম্ভব। এতে করে লসের পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে আনা সম্ভব। চলুন জেনে নেয়া যাক ফেইক অর্ডার থেকে রক্ষা পাওয়ার কৌশল।
কাস্টমারের প্রোফাইল দেখে ধারণা নেয়া
এই কাজটা অনেক সময় সাপেক্ষ তবে, অনেক সময় এখান থেকে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়। যখন একজন কাস্টমার অর্ডার কনফার্ম করে, তখন তার প্রোফাইল চেক করে কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য করা উচিত।
- তার প্রোফাইল কি পাবলিক করা নাকি লক করা?
- প্রোফাইলের নামটা কি যথাযথ নাকি ফেইক
- প্রোফাইল পিকচারে নিজের ছবি দেয়া আছে নাকি র্যান্ডম ছবি দেয়া
- আইডিটা ভেরিফাইড কি না
- এই আইডি আপনার পেইজে লাইক দিয়েছে কিনা (মেটা বিজনেস স্যুটে দেখা যায়)
এই বিষয় গুলো দেখে আপনি ধারণা করতে পারবেন এই প্রোফাইল এর ব্যক্তি ফেইক হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু। বাস্তবে, প্রকৃত ছবি এবং নাম ব্যবহার করেও ফেইক অর্ডার দেয়ার নজির যে নেই, তা নয়। আমাদের দেশে সেটাও হয়।
তবে এই বিষয়গুলো দেখে আপনি একটা ধারণা করতে পারবেন। যদি প্রোফাইলের সব বিষয়গুলো যাচাই করে গ্রহণযোগ্য মনে হয়, সেক্ষেত্রে আপনি তার অর্ডার প্রসেস করতে পারেন আর যদি দেখে সন্দেহজনক হয় তাহলে তার কাছে ডেলিভারি চার্জ অ্যাডভান্স চাইতে পারেন।
ঠিকানা এবং ফোন নম্বর যাচাই
যে সকল আইডি গুলো দেখে সন্দেহজনক মনে হবে, তাদের পূর্ণ ঠিকানা নিবেন। যদি কোন আইডি দেখে বেশী সন্দেহের উদ্রেক হয় সেক্ষেত্রে তাকে জিজ্ঞাসা করবেন এই ঠিকানার আশেপাশে কোন পরিচিত জায়গা বা ল্যান্ডমার্ক আছে কি না।
এটা জাস্ট বোঝার জন্য যে সে ভালভাবে সঠিক উত্তর দেয় নাকি খুব কমন কিছু বলে অ্যাভয়েড করে যায়। জনে জনে যেহেতু জিজ্ঞাসা করা সম্ভব না, তাই সন্দেহ উদ্রেক করে এমন আইডিগুলোকে জিজ্ঞাসা করবেন।
ফোন নম্বর যাচাই এর মাধ্যমেও আপনি কিছুটা হলেও ফেইক অরডার থেকে বাঁচতে পারবেন। যদি আপনার টিম থাকে এবং সেরকম ব্যবস্থা থাকে সেক্ষেত্রে অর্ডার করার জন্য যে নম্বরগুলো দিয়েছে সেগুলোতে ফোন করে জিজ্ঞাসা করার মাধ্যমে আপনি অর্ডার কনফার্ম করতে পারেন। যে নম্বরে একাধিক বার যোগাযোগ করে বন্ধ পাবেন সেখানে অর্ডার সাথে সাথে পাঠাবেন না, ঐ ব্যক্তির পুনরায় ম্যাসেজ বা যোগাযোগের অপেক্ষায় থাকবেন।
ডেলিভারি সাকসেস রেট
কিছু কিছু ডেলিভারি কোম্পানি এই ফিচারটি নিয়ে এসেছে, সিঙ্গেল অর্ডার প্রসেস এর ক্ষেত্রে ফোন নম্বর দেয়ার সাথে সাথে ডেলিভারি সাকসেস রেট দেখায়। তবে বাল্ক অর্ডার প্লেস এর ক্ষেত্রে এই ফিচারটা আপাতত নেই।
তবে যদি আপনার টিম বড় থাকে সেক্ষেত্রে সিঙ্গেল অর্ডার প্লেইস না করে, প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে শুধুমাত্র নম্বরগুলো যাচাই করে নিতে পারেন এবং যেগুলো সাকসেস রেট ভাল সেগুলো নিয়ে বাল্ক অর্ডার প্লেস করলেন।
তবে বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলি, সাকসেস রেট ১০০% দেখানোর পরেও ফেইক অর্ডারের পাল্লায় পড়ার অভিজ্ঞতা আমাদের আছে!
ওয়েবসাইটে অর্ডার নেয়া
যদি আপনার সামার্থ্য থাকে তাহলে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনি অর্ডার প্রসেস করতে পারেন। আমাদের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি ওয়েবসাইটে অর্ডারের ক্ষেত্রে ফেইক অর্ডার তুলনামূলক কম আসে। এছাড়াও ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ধরণের অপশন এবং ফিল্টার ব্যবহার করে আপনি বার বার একই ব্যক্তির ফেইক অর্ডার বন্ধ করতে পারবেন। ওয়েবসাইট ব্যবহার করলে অতিরিক্ত অনেক সুবিধা তো আপনি পাবেন। সহজ করে বললে, ফেসবুকে অর্ডার দেয়া সহজ, ওয়েবসাইটে অর্ডার দেয়া তুলনামূলক একটু বেশী এফোর্ট দিতে হয়,কাস্টমার জেনে বুঝে ইনফরমেশন দেন তাই ফেইক অর্ডারও কম আসে।
ডেলিভারি চার্জ অ্যাডভান্স চাইতে পারেন
আমাদের দেশী এই সিস্টেম এখন অনেকেই ফলো করা শুরু করেছেন, আপনিও চাইলে করতে পারেন তবে এখানে একটু রিস্ক আছে। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি কিছু প্রতারক চক্র পেইজ ক্রিয়েট করে এটার ফায়দা নিয়ে প্রতারণা করেছে।অগ্রিম ডেলিভারি চার্জ নিয়ে কাস্টমারদের ব্লক করে দিয়েছে বা যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। তাই আপনি যদি ব্যবসায়ী হয়ে অ্যাডভান্স নিতে চান তাহলে আপনাকে নিচের বিষয়গুলো খেয়াল করতে হবেঃ
পেইজের রিভিউ সেকশন
বাস্তব অভিজ্ঞতা বলি, সেদিন একটা পেইজে সোফার কুশন অর্ডার করতে গিয়েছি। উনারা ঢাকার ভেতরে ২০০ টাকা অগ্রিম চাইলো এবং কেনো চাইলো সেটাও খুব সুন্দর করে আমাকে বুঝিয়ে দিলো। আমি দিয়েও দিতাম, আমি জাস্ট রিভিউ চেক করতে গিয়ে দেখি তাদের পেইজে রিভিউ সেকশন বন্ধ করা এবং কাস্টমার ফিডব্যাক সম্বলিত কোন পোস্ট তার পেইজ থেকে কখনো দেয়া হয় নি। এই দুইটা বিষয় দেখে আমি আর ঐ পেইজ থেকে অর্ডার করি নি। এর অর্থ হচ্ছে, আপনি যদি অ্যাডভান্স চান তাহলে অবশ্যই পেইজের রিভিউ সেকশন অন রাখবেন এবং সেখানে যেন কাস্টমারের জেনুইন রিভিউ থাকে সেটা নিশ্চিত করবেন এবং কাস্টমারের ফিডব্যাক এর স্ক্রিনশট পেইজে দিয়ে রাখবেন, তাহলে কাস্টমার ভরসা পাবে।
পার্সোনাল বিকাশে না নিয়ে পেমেন্ট সিস্টেম চালু করুন
আপনি যখন অ্যাডভান্স নেয়ার জন্য পার্সোনাল বিকাশ নম্বর না দিয়ে একটি পেমেন্ট নম্বর দিবেন, সেক্ষেত্রে কাস্টমার আপনার সম্পর্কে একটা পজিটিভ ধারনা পাবে এবং আপনার পেইজের প্রতি তার আস্থা তৈরি হবে, ভরসা বাড়বে।
কাস্টমারকে নরম সুরে বোঝান
আমাদের দেশের মানুষ ঠকে অভ্যস্ত। তাই তারা সহজে আপনাকে অ্যাডভান্স দিতে চাইবে না এটাই স্বাভাবিক। কাস্টমারকে “এটা আমাদের পলিসি”, “আমরা অ্যাডভান্স ছাড়া অর্ডার নেই না”, এরকম রুড টোনে কথা না বলে সফট টোনে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করুন। তাহলে সেও আপনার সাথে সহযোগিতা করবে।
আশা করি আমাদের অভিজ্ঞতার আলোকে লেখা পরামর্শগুলো আপনাদের কাজে আসবে। ধৈর্য নিয়ে পুরো লেখাটি পড়ার জন্য আপনাদেরকে ধন্যবাদ।