ডিজিটাল মার্কেটিং কি?
আজকের দুনিয়ায় ডিজিটাল মার্কেটিং একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় বিষয় এবং অনেক মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। আসলে ডিজিটাল মার্কেটিং জিনিসটা কি তা বোঝার আগে চলুন আগে জেনে নেই মার্কেটিং কি?
অনেকেই মার্কেটিং এর ব্যাপারটাকে সেলসের সাথে গুলিয়ে ফেলেন। আসলে মার্কেটিং হল সেলসের আগের ধাপ। আপনার যদি কোন প্রোডাক্ট বা সার্ভিস থাকে, তবে তা মানুষের কাছে সেলস বা বিক্রয়ের জন্য যা যা করবেন তার সবই মার্কেটিং এর পার্ট। আপনি প্রোডাক্ট বিক্রির জন্য কি করতে পারেন?
প্রোডাক্ট এর ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করার জন্য বিভিন্ন ক্যাম্পেইন চালাতে পারেন কিম্বা প্রডাক্ট রিলেটেড নানা রকম সভা সেমিনার এর আয়োজন করতে পারেন অথবা বিভিন্ন রকম গণসংযোগ কার্যক্রম চালাতে পারেন। এই যে কাজগুলি আপনি করছেন তার প্রধান উদ্দেশ্য হল মানুষকে আপনার প্রোডাক্ট সম্পর্কে জানানো এবং আলটিমেটলি তাকে আপনার প্রোডাক্ট কিনতে উৎসাহিত করা। কাজেই মার্কেটিং এর উদ্দেশ্য হল মানুষকে আপনার প্রোডাক্ট কেনা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া।
এখন এই উপরে বলা কাজ গুলো যদি আপনি ইন্টারনেট বা অনলাইনে করেন যাতে করে মানুষ যে কোন জায়গা থেকে তার স্মার্ট ফোনে কিম্বা অন্য কোন ইন্টারনেট এনাবোল্ড ডিভাইস থেকে দেখে বা শুনে এবং আপনার প্রোডাক্ট সম্পর্কে জানতে পেরে কেনার জন্য আগ্রহী হয়, তবে সেটাই হল ডিজিটাল মার্কেটিং। সহজ কথায়, ডিজিটাল মাধ্যম (ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, টুইটার, ইমেইল, মেসেঞ্জার, হোয়াটসাপ, ইউটিউব ইত্যাদি) ব্যাবহার করে আপনার পন্যের প্রচার প্রচারনা করাই হল ডিজিটাল মার্কেটিং এর মূল কাজ।
একটা বিষয় একটু ঠাণ্ডা মাথায় ভাবেন যে, আপনার আশে পাশে যত মানুষের স্মার্ট ফোন আছে সবাইকে যদি তাদের ডিজিটাল মাধ্যমে (বিশেষ করে ফেসবুক) সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী আপনার প্রোডাক্ট এর প্রচার চালান যায় আর সেখান থেকে শুধুমাত্র ৫% মানুষ কেনার জন্য আগ্রহী হয়, তাহলে আপনার সেলস ফিগার কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে!!
এটা একটা প্রমানিত সত্য যে ডিজিটাল মাধ্যমের ভালো একটা এড ক্যাম্পেইন থেকে ৫% মানুষ কনভার্ট হয় প্রোডাক্ট কেনার জন্য।
ফেসবুক মার্কেটিং কি?
ফেসবুক হল একটি ভীষন জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম। মানুষের একটা অতি স্বাভাবিক প্রবৃত্তি হল অন্য মানুষের প্রশংসা পাওয়া। এইজন্য সে তার সকল কাজ কর্মের বিবরন দিয়ে নিজের ফেসবুকের পাতা ভরিয়ে ফেলে। একজন মানুষের ব্যাক্তিগত, সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় চিন্তা, চেতনা, দৃষ্টিভঙ্গি, রুচি, পছন্দ, অপছন্দ, ভালো লাগা, না লাগা ইত্যাদি প্রায় সব বিষয়ই জানা যায় তার ফেসবুক প্রফাইল থেকে।
ফেসবুক তার ব্যবহারকারী দের (ইউজার) সকল তথ্য খুব চমৎকারভাবে নিজের মধ্যে ধারন করে রাখে। এখন আপনি যদি চান আপনার প্রোডাক্টের সম্ভাব্য ক্রেতাদের রিয়াল-লাইফ ডাটা ব্যাবহার করবেন যাতে করে আপনি কার্যকর ভাবে টারগেটিং করতে পারেন, তাহলে ফেসবুক সেই ব্যবস্থা করে রেখেছে আপনার জন্য। কথায় বলে, ফেল কড়ি, মাখো তেল!! ফেসবুক কে আপনি টাকা দিন এড রান করার জন্য, ফেসবুক আপনার টারগেট অডিয়েন্স এর সকল ডাটা অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে তুলে ধরবে আপনার সামনে। এরপর আপনি যদি সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ডাটা ফেসবুকের রোবটকে নির্দেশ করে দেন, তাহলে ফেসবুক বাবাজী স্মার্ট ওয়েতে আপনার নির্দেশিত টার্গেট অডিয়েন্সের কাছেই প্রোডাক্ট এর প্রচার চালাবে।
তাহলে, এবারে একটু চিন্তা করুন শুধুমাত্র ফেসবুক কে ব্যবহার করে কত সহজে আপনি মানুষের কাছে রিচ করতে পারছেন। কোন মাইক ভারা করার হাঙ্গামা নেই, অনেক লোকবল এর প্রয়োজন নেই, টিভি-রেডিও তে বিজ্ঞাপন প্রচারের দরকার নেই, ব্যানার-পোষ্টার ছাপানোর দরকার নেই।
আপনার প্রয়োজন শুধুমাত্র একটা সঠিক পরিকল্পনা। আর সেই অনুযায়ী ফেসবুক কে নির্দেশনা দেওয়া!! এরপর রিলাক্স!! বাকি কাজ ফেসবুকের!!
আপনার বিজনেসে ফেসবুক মার্কেটিং কেন দরকার?
আপনি যে বিজনেসই করেন না কেন, উদ্দেশ্য একটাই!! আর তা হল বেশি বেশি সেলস করা এবং আলটিমেটলি বেশি বেশি রেভিনিউ জেনারেট করা ও প্রফিট মাক্সিমাইজ করা!! এর জন্য উপযুক্ত মার্কেটিং এর কোন বিকল্প নেই। কিন্তু আমরা সচরাচর মার্কেটিং বলতে ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং কেই বুঝে থাকি।
ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং এর অনেকগুলি অসুবিধার মধ্যে অন্যতম হল এটা বেশ কস্টলি। এই মার্কেটিং এর মূল ফোকাসটা থাকে টিভি, রেডিও, পেপার-পত্রিকা, ব্যানার-ফেস্টুন ইত্যাদি ফিজিক্যাল মাধ্যমে পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করা। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই অ্যাডগুলো রিয়াল অডিয়েন্সকে টার্গেটই করতে পারে না। ফলে আপনার মূল্যবান অর্থের অপচয়ই হয় শুধু!!
উপরে বর্ণিত অসুবিধাগুলি আপনি খুব সহজেই দূর করতে পারেন। ফেসবুক মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনার প্রোডাক্ট অনুযায়ী টার্গেট অডিয়েন্স সেট করতে পারবেন। ফেসবুক আপনার সামনে আপনার টার্গেট অডিয়েন্সের ডিটেইল প্রোফাইল তুলে ধরে!! যার জন্য আপনি দারুণভাবে সম্ভাব্য ক্রেতা সম্পর্কে আইডিয়া করতে পারেন এবং কিভাবে তাদেরকে প্রকৃত ক্রেতায় পরিণত করবেন সে ব্যাপারে কার্যকর কৌশল ঠিক করে নিতে পারবেন। ফেসবুক মার্কেটিং খুবই কম খরচে আপনাকে অধিক সেলস জেনারেট করতে সাহায্য করবে।
যেহেতু দেশে স্মার্ট ফোন এবং ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েই চলেছে, ডিজিটাল মার্কেটিং এর স্কোপও অনেক বেশি প্রসারিত হচ্ছে!! ফেসবুক বিহীন স্মার্ট ফোন ইউজার বিরল!! কাজেই আপনার বিজনেসে পরিকল্পিত ফেসবুক মার্কেটিং সত্যিকারের ভ্যালু এড করতে পারে!!
ফেসবুক মার্কেটিং আপনাকে কি কি সুবিধা দিবে?
ক) টার্গেট কাস্টমার পাওয়া অনেক সহজ।
খ) যে কোন জায়গাকে টার্গেট করে এড রান করতে পারবেন।
গ) ফেসবুকের লক্ষ কোটি ইউজার থেকে আপনার ব্যাবসার জন্য প্রচুর গ্রাহক পেতে পারেন।
ঘ) এটি ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং এর চেয়ে অনেক সাশ্রয়ী।
ঙ) আপনার যদি ওয়েবসাইট, ব্লগ কিম্বা ইউটিউব চ্যানেল থাকে তাহলে পিক্সেল ব্যাবহার করে রিটারগেটের মাধ্যমে প্রচুর গ্রাহক আনতে পারবেন।
চ) ফেসবুক মার্কেটিং নিজের/ব্যাবসার অনলাইন আইডেন্টিটি বা ব্রান্ডিং তৈরিতে সাহায্য করে।
ছ) ফেসবুক পেজের ফ্যান ফলোয়ারদের নিয়ে কমিউনিটি বিল্ড করতে পারেন যা আপনাকে বিজনেসের অনেক কার্যকর কৌশল তৈরিতে সাহায্য করবে। ফ্যান ফলোয়ারদের ভেতর থেকে অনেক গ্রাহক পাওয়া সম্ভব।
ফেসবুক মার্কেটিং কতটা সহজ?
ফেসবুক মার্কেটিং পৃথিবীর সহজতম কাজ গুলির একটা। আপনার যদি একটা স্মার্ট ফোন থাকে, কোন বিশেষ রিজার্ভেশন না থাকলে ধরেই নেওয়া যায় আপনার একটা ফেসবুক অ্যাকাউন্টও আছে। তো এখন ফেসবুক মার্কেটিং আপনি যদি করতে চান, তাহলে আপনার যেটা প্রোডাক্ট সেইটা নিয়ে আপনার প্রোফাইলে একটা পেজ খুলতে হবে।
ফেসবুক পেজ না থাকলে আপনি কোন এড রান করতে পারবেন না। পেজ খোলাও খুবই সহজ একটা কাজ। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন পেজটা দেখতে প্রফেশনাল হয়। এতে সুন্দর একটি লোগো এবং কভার ফটো ইউজ করতে হবে যেটা ভিজিটরদের কাছে আই-ক্যাচি হবে। আপনার পণ্যের বিভিন্ন দিক নিয়ে পেজে নানারকম পোস্ট করতে হবে নিয়মিত। এতে করে এংগেজমেন্ট বাড়বে আপনার ফেসবুক পেজে।
এরপর একটা এড অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে যেখান থেকে আপনি আপনার প্রোডাক্ট এর এড রান করতে পারবেন যখন খুশি তখন। তো হয়ে গেল আপনার ফেসবুক মার্কেটিং।
তবে ফেসবুক মার্কেটিং এর সফলতার জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরী যেটা সেটা হল সঠিক পরিকল্পনা যা না থাকলে শুধু ফেসবুক মার্কেটিং এর কল্পনাই পরে থাকবে। সফলতার পরি কে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না!! সে উড়ে চলে যাবে!!
কিভাবে ফেসবুক মার্কেটিং করতে পারেন?
ক। প্রথমেই একটা প্রফেশনাল লুকিং পেজ খুলুন আপনার ফেসবুক প্রোফাইলে।
খ। আপনার ফেসবুকের বন্ধুদের আমন্ত্রণ জানান পেজে লাইক দিতে এবং পেজ ফলো করতে।
গ। পেজে প্রোডাক্টের বিভিন্ন দিক নিয়ে নিয়মিত পোস্ট করতে থাকুন। পোস্টগুলিতে ভ্যালু এডিশন করতে পারলে অর্থাৎ ভিজিটরদের জন্য এগুলি হেল্পফুল হলে আপনি পেজে অনেক এংগেজমেন্ট পাবেন।
ঘ। এড অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন। তবে সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি বিজনেস ম্যানেজার খুলে নেন যেখানে ৫টি এড অ্যাকাউন্ট পাবেন। আপনার অবশ্যই একটি ডুয়েল কারেন্সি ক্রেডিট কার্ড কিম্বা পেপাল অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে ফেসবুক কে পেমেন্ট করার জন্য।
ঙ। মানুষকে আকৃষ্ট করতে পারে এমন ছবি ও ভাষা ব্যাবহার করে ইমোশনাল এবং ড্রাইভিং এড কপি তৈরি করতে হবে।
চ। সঠিক পরিকল্পনা মতো অডিয়েন্সকে সুনির্দিষ্টভাবে টার্গেট করুন।
ছ। ফেসবুক এড থেকে আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত পেজে বা মেসেঞ্জারে কিম্বা ওয়েবসাইটের ল্যান্ডিং পেজে টার্গেট অডিয়েন্সকে নিয়ে আসতে পারবেন।
জ। ফেসবুক মার্কেটিং এর মাধ্যমে একটা সেট অফ অডিয়েন্সকে বারবার টার্গেট করা যায়।
ঝ। কেও যদি আপনাকে ফেসবুক বুস্টিং এর কথা বলে, তবে অবশ্যই কনফিউজ হবেন না। কারণ বুস্টিং শুধুমাত্র আপনার কোন পোস্ট কে অনেক মানুষের কাছে নিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু এইসব মানুষদের উপর আপনার কোন নিয়ন্ত্রণ থাকবে না যেহেতু তাঁদের কোন ডাটা আপনি পাবেন না। অন্যদিকে ফেসবুক মার্কেটিং আপনাকে টার্গেট অডিয়েন্সের রিয়াল-টাইম ডাটা এনে দিবে এবং এই অডিয়েন্সের সকল প্রয়োজনীয় ডাটা আপনি সংরক্ষণ করতে পারবেন পুনরায় ব্যাবহার করার জন্য।